গাছ চুরির দায়ে আ.লীগের দুই নেতার কারাদণ্ড-প্রথম আলো

গাছ চুরির দায়ে জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতা ও ট্রাক্টরের এক চালককে কারাদণ্ড এবং জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার রহমান, আবদুল গোফফার ও ট্রাক্টরচালক আবদুল কাদের

আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার রহমান ও আবদুল গোফফারকে দুই মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া আদালত ট্রাক্টরের চালক আবদুল কাদেরকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার
টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেন। তাঁদের জয়পুরহাট কারাগারে পাঠানো হয়েছে
আজিজার রহমান পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং আবদুল গোফফার একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
পাঁচবিবি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে পাঁচবিবি-কামদিয়া সড়কের সালাইপুর বাজারের কাছে সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে পাচার করার প্রাক্কালে ট্রাক্টরের ট্রলিভর্তি ইউক্যালিপটাস গাছের গুঁড়ি আটক করা হয়। এ সময় আজিজার রহমান, আবদুল গোফফার ও ট্রাক্টরের চালক আবদুল কাদেরকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাকিম নুর উদ্দিন আল ফারুক তাঁদের ওই সাজা দেন
ইউএনও নুর উদ্দিন আল ফারুক বলেন, গাছ কাটার জরুরি প্রয়োজন হলে যথাযথভাবে আইন মেনে কাটতে হয়। পাঁচবিবি উপজেলার ওই রাস্তার গাছ কাটার বিষয়ে তিনি প্রশাসন থেকে কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। যাঁরা গাছ পাচারের অভিযোগে আটক হয়েছেন, তাঁরা গাছ কাটার সপক্ষে বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি
তবে আজিজার রহমান ও আবদুল গোফফার দাবি করেন, মাস খানেক আগে কালবৈশাখীতে পাঁচবিবি-কামদিয়া সড়কের প্রচুর গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়ে। জেলা পরিষদের প্রশাসক এস এম সোলায়মান আলী ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো কেটে এক জায়গায় জড়ো করার দায়িত্ব দেন পাঁচবিবি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন ও তাঁদের। সেই অনুযায়ী তাঁরা গাছগুলো কেটে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদ বাজারে রাস্তার পাশে জড়ো করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার ইমরুল কায়েস ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতা মোজাফফর হোসেন গাছগুলো ট্রাক্টরে করে নেওয়ার জন্য তাঁদের বলেন। পরে সার্ভেয়ার চলে যান। পুলিশ তাঁদের আটক করার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মোজাফফর হোসেন মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। তবে তাঁরা গাছগুলো পাচার করার কথা অস্বীকার করেন
কুসুম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেন, সড়কের গাছ ভেঙে পড়ার অজুহাতে কমপক্ষে দেড় শ গাছ কেটে লুটপাট করা হয়েছে। সামান্য কিছু গাছ কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদ বাজারে ফেলে রাখা হলেও রাতের আঁধারে বড় বড় গাছগুলো কেটে পাচার করা হয়েছে। এখনো স্থানীয় সালাইপুর ও চানপাড়া করাতকলে তল্লাশি চালালে অনেক গাছের বড় বড় কাণ্ড উদ্ধার করা যাবে। তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মোক্তার হোসেন এলাকায় গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত
এ বিষয়ে জানতে মোক্তার হোসেনের মুঠোফোনে আট-নয়বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি
জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী বলেন, কালবৈশাখীতে ওই সড়কের কিছু গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়ে। জেলা পরিষদ থেকে সার্ভেয়ারকে দিয়ে ওই এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় গাছগুলো কেটে এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছে। চুরির উদ্দেশে কেউ গাছ নিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাটা গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানান

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

No comments: